ঢাকাWednesday , 2 October 2024
  1. অন্যান্য
  2. অর্থ ও বানিজ্য
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্রাইম নিউজ
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জাতীয়
  9. বিনোদন
  10. বিভাগের খবর
  11. রাজনীতি
  12. সর্বশেষ সংবাদ
  13. সারা বাংলা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাগর থেকেই ইলিশ পাচার।

admin
October 2, 2024 8:44 am
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক// জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লেও সাগর থেকেই তা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভরা মৌসুমেও আড়তে কিংবা বাজারে সেভাবে ইলিশের দেখা মিলছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার দামও বেশ চড়া। স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই ইলিশ মাছ। এদিকে জেলেদের অনেকে সাগরে ইলিশ কম পাওয়ার দাবি করেছেন। এতে দাদনদারের চাপে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে দেশের বাজারে দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি করছে সরকার। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলশের দাম শুনে অনেকের মুখ মলিন। অনেককে দাম জিজ্ঞেস করতে দেখা গেলেও কিনতে দেখা গেছে কম মানুষকেই। বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল আলম বলেন, প্রায় সাড়ে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম চাচ্ছে ১৪শ টাকা। এই ছোট সাইজের ইলিশের এত দাম! কেনা সম্ভব না। ইলিশ রপ্তানির খবরে দাম আগের চেয়ে বেড়েছে।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিপক্ষে অবস্থান নিলেও দুর্গাপূজা সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে প্রায় তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে এক হাজার ১৮০ টাকা দরে। ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তের পর ইলিশের চাহিদা এবং দামে প্রভাব পড়েছে।

এ বছর দাম বেশি হওয়ার পেছনে ইলিশের কম প্রাপ্যতাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। নদীতে ইলিশ স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে বিক্রেতারা বলছেন, ভারতে রপ্তানির ঘোষণা দেওয়ার পর দাম আও বেড়েছে।

এদিকে ভরা মৌসুমে বরিশাল নগরীর ‘ইলিশ মোকাম’ হিসেবে পরিচিত পোর্ট রোডের আড়তে ইলিশ নেই। জেলেরা খালি হাতে ফিরছেন। সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় দাদনের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ইলিশ সমুদ্র থেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন জেলেরা।

এদিকে রপ্তানির খবরে দেশের বাজারে ইলিশের দাম বাড়লেও সেটিকে প্রধান কারণ মনে করছেন না বরিশালের আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মূলত বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। সাগরের মাছ আড়তে আসছে না। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদার মো. মোবারক হোসেন বলেন, দাদন দেওয়া হলেও সাগরের জেলেরা এখন আর এই বাজারে আসেন না। তারা তাদের সুবিধামতো স্থানে অর্থাৎ যেখানে বেশি দাম পান, সেখানে ইলিশ বিক্রি করে দিচ্ছেন।

নগরীর বাংলা বাজারে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হয় ১২শ টাকায়। এক কেজি বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ১৮০০-১৯০০ টাকায়। সোয়া কেজি ও তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওজনেরটা বিক্রি হয় ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে।

অতীতে ইলিশের নৌকায় মাসোহারা, পুলিশের হয়রানির অভিযোগ ছিল। যারা আড়ত, ঘাট দখল, সিন্ডিকেট করত তারাও বেশিরভাগ এলাকাছাড়া। তারপরও এবার মাছের দাম বেশি কেন- এমন প্রশ্নে চাঁদপুর মাছের আড়তের ব্যবসায়ীরা মাছের ঘাটতিকেই বেশি দায়ী করেন। চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন গাজী বলেন, এ বছরের মতো এত দাম কোনো সময় হয়নি।

ইলিশের সংকটের কারণ জানতে যোগাযোগ করা হয় সাগরে যাওয়া এক জেলের সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আড়তে ইলিশ ওঠানোর চেয়ে সাগরে বসেই ভারতীয় জেলেদের কাছে ইলিশ বিক্রি সহজ। বড়-মাঝারি সাইজের মাছ যা পাই, তা সাগরে বসেই বিক্রি করে দিই। ওরা দামও ভালো দেয়।

জানা গেছে, এভাবে বেশির ভাগ জেলে সাগরেই ভারতের জেলেদের কাছে ইলিশ বিক্রি করে দেন। এ জন্য দেশের মোকামগুলোতে তেমন ইলিশ আসছে না। অনেক ক্ষেত্রে মহাজনের সঙ্গে কথা বলে বিক্রি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অগোচরেও বিক্রি হয়।

বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পটুয়াখালী কুয়াকাটার কাছে আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার আবদুল আউয়াল বলেন, ইলিশের সংকট কমাতে সাগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির দরকার। একই সঙ্গে যেসব জেলে সাগরেই ইলিশ বিক্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কুমিরা এলাকার জেলে সরদার বিপ্লব জলদাস বলেন, ইলিশের মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার জন্য তিনি ৫-৭ জন শ্রমিক রাখেন। কিন্তু খরচের তুলনায় কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে চার শ্রমিককে ছাঁটাই করেছেন।

সন্দ্বীপের দক্ষিণে সাগরে এবং পশ্চিমাংশে মেঘনার মোহনায় ছোট-বড় সাতটি ঘাটে ইলিশ ধরা হয়। সেখানকার গাছতলী ঘাটের দোকানি মো. সাইফুল ইসলাম এ বছর দুটি নৌকায় ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দাদন দিয়ে তিনি ২০ মাঝি নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিন দফা সাগরে দুটি নৌকা পাঠিয়ে কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা পাননি।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর জুলাই-আগস্টে যেখানে ইলিশ ৮১ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন আহরণ হয়, সেখানে এ বছর জুলাই-আগস্টে ধরা পড়েছে ৫৬ হাজার ২৭৩ টন। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে এবার ২৫ হাজার ৬০৩ টন ইলিশ কমা ধরা পড়েছে।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখা হবে। ইলিশ আহরণ কম, প্রাপ্যতা কম। মানুষ খেতে পারছে না। এতে খুব দুঃখিত হব, যদি আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি। রপ্তানির ঘোষণার আগে এক কেজি ওজনের মাছের দামটা ১৫শ টাকা ছিল, এখন এটা ১৬শ-১৭শ টাকা শোনা যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত না। তিনি আরও বলেন, রপ্তানির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এবার আহরণ কম, সেই অর্থে রপ্তানি না করলেই হতো। সেটা যে কারণেই হোক, হচ্ছে। আমাদের কথা হলো- দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে, আমি এই কথাটায় এখনও আছি।

যদিও কিছু ব্যবসায়ী ইলিশ প্রাপ্যতার হার কমার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণকে দায়ী করছেন। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী বলেন, নদীতে দূষণ বাড়তেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে যেসব জায়গা দিয়ে মাছ ঢোকে- ভোলা, হাতিয়া এসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ডুবোচর তৈরি হয়েছে। এ জন্য মাছ সহজে ঢুকতে পারছে না। এ ছাড়াও বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় পানির লবণাক্ততা না কাটায় ইলিশ মাছ আসে না। এরপর নির্বিচারে জাটকা ও মা ইলিশ নিধন করা হয়। এসব নানা কারণে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

যদিও উপরোক্ত দাবির কয়েকটিকে অনুমানভিত্তিক বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হাসান ফারুক। তিনি বলেন, আগের চেয়ে ইলিশের পরিমাণ কমছে না, বরং বাড়ছে। তবে প্রবৃদ্ধির হার হয়ত কমেছে। জেলেদের তো অনুমানভিত্তিক কথা। দেখা যাবে, তারা এ মাসে কম পেয়েছে, আবার পরের মাসে বেশি পেয়েছে।

ওয়ার্ল্ডফিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাজধানীতে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১০০০-১০৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে ৯০০-৯৫০ টাকায়, ২০২১ সালে ১২০০-১২৫০ টাকায়, ২০২২ সালে ১১৫০-১২০০ টাকায়, ২০২৩ সালে ১৪৫০-১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।